অমিত খিলাড়ি, সবং: ‘চোখ’ যাতে বন্ধই থাকে, তাই কি এই কাণ্ড? পশ্চিম মেদিনীপুরের সবং ব্লকের একটি স্কুলে নতুন ৬টি সিসিটিভি ক্যামেরা চুরি যাওয়ার ঘটনায় শুরুতে পুলিশের কাছে অভিযোগ করা হলেও, পরে প্রধান শিক্ষক নিজেই তা প্রত্যাহার করে নেন। স্বাভাবিকভাবেই, এই ঘটনার পর জোর চর্চা শুরু হয়েছে গোটা এলাকায়। কী এমন ছিল সেই ক্যামেরাগুলোর মধ্যে, যা লাগানোর আগেই ‘উধাও’ হয়ে গেল?
সবং ব্লকের ওই উচ্চ বিদ্যালয় সম্প্রতি ৭টি নতুন সিসিটিভি ক্যামেরা ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কিনেছিল। উদ্দেশ্য ছিল স্কুল চত্বরের নিরাপত্তা আরও আঁটসাঁট করা। কিন্তু, লাগানোর আগেই ঘটে বিপত্তি! স্কুলের একটি অফিস ঘরে রাখা ক্যামেরাগুলোর মধ্যে ৬টি হঠাৎই ‘নিখোঁজ’ হয়ে যায়। তবে আশ্চর্যের বিষয়, ১টি ক্যামেরা এবং অন্যান্য মূল্যবান যন্ত্রপাতি অক্ষত অবস্থায় পাওয়া যায়।

২০ ফেব্রুয়ারি, প্রধান শিক্ষক সবং থানায় অভিযোগ জানান। যেহেতু এটি একটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের বিষয়, তাই পুলিশ লিখিত অভিযোগের অপেক্ষা না করেই তদন্ত শুরু করে। তদন্তের অগ্রগতির সঙ্গে সঙ্গে সামনে আসে একের পর এক চাঞ্চল্যকর তথ্য। পুলিশ তদন্তে গিয়ে দেখতে পায়, অফিস ঘরের তালা ভাঙার কোনও চিহ্নই নেই। বরং, তালাটাই উধাও! তাহলে কি চাবির মাধ্যমেই খোলা হয়েছিল ঘরটি? তদন্তে জানা যায়, ওই ঘরের চাবি প্রধান শিক্ষকসহ মাত্র তিনজনের কাছেই ছিল। তাঁদের মধ্যে দু’জন প্রথম থেকেই স্কুলে সিসিটিভি বসানোর ঘোর বিরোধিতা করছিলেন।
পুলিশ একাধিকবার স্কুলে গিয়ে শিক্ষক-শিক্ষিকা, শিক্ষাকর্মী এবং পরিচালন সমিতির সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করে। এর মাঝেই খেলা ঘুরে যায় অন্যদিকে! ২২ ফেব্রুয়ারি, আচমকাই প্রধান শিক্ষক সবং থানায় একটি চিঠি দিয়ে জানান, “আমরা ওই সিসিটিভি ক্যামেরাগুলি খুঁজে পেয়েছি। তদন্ত বন্ধ করা হোক।” পুলিশ চিঠি পেয়ে অবাক! তাহলে কি সত্যিই ক্যামেরা হারায়নি, নাকি অন্য কোনও গোপন কারণ লুকিয়ে আছে?
একজন পুলিশ আধিকারিক বলেন, “তদন্তে গিয়ে দেখেছি, তালা নেই, কিন্তু চুরি হয়েছে দাবি করা হচ্ছে। এটা অদ্ভুত! এরপর হঠাৎ করে প্রধান শিক্ষক নিজেই অভিযোগ তুলে নেওয়ায় রহস্য আরও গভীর হয়েছে।”
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন, “কী বলব! আমরা খোলা চোখেই অনেক কিছু দেখি। এরপর সিসিটিভি বসলে তো সব ধরা পড়বে! হয়তো তাই এত গোপনীয়তা!” অন্যদিকে, এলাকার বাসিন্দাদের মধ্যে গুঞ্জন, “এটা কি নিছক ক্যামেরা চুরি, নাকি এর পেছনে বড় কিছু লুকিয়ে আছে?”

প্রধান শিক্ষক দাবি করেছেন, ২২ ফেব্রুয়ারি ক্যামেরাগুলি ফেরত পাওয়া গিয়েছে এবং শনিবারই সেগুলি বসানোও হয়ে গিয়েছে। তবে স্কুলের বাইরে অনেকেই বলছেন, “বসানো হয়েছে? কই, তো আমরা দেখলাম না!”
একজন জেলা পুলিশ কর্তা হেসে বলেন, “সবং থানায় এমন অদ্ভুত ‘অ্যাপোলোজি লেটার’ আসতে আমরা অভ্যস্ত নই! তবে একটা কথা ঠিক, ‘গোপন কথাটি’ রবে না গোপনে… বেরিয়ে আসবেই!”
এই ঘটনার পেছনে সত্যিই কী রয়েছে? ক্যামেরা কি সত্যিই হারিয়েছিল, নাকি অন্য কোনও উদ্দেশ্য ছিল? পুলিশ আপাতত তদন্ত বন্ধ করলেও, স্থানীয়দের মনে প্রশ্ন রয়েই গেছে!